কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ওয়াহিদুজ্জামান অর্ক
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের পদ্মানদীর কূলে এএইচ ব্রিকস টিনের চিমনির বসিয়ে ভাটা স্থাপন করে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধভাবে গাছের লাকড়ি পোড়ানোর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়লার পরিবর্বতে বনায়নের কচিকাঁচা গাছ কর্তন করে প্রতিদিন হাজার হাজার মন লাকড়ি পোড়ানোর ফলে পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে এমন অভিমত স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের। প্রশাসন এই ইটভাটা সহ ১১ ইটভাটায় অভিযান চালাবে না বলে জানালেন ভাটা মালিক আলাল।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, হরিপুর জোড়াবটতালা পদ্মানদীর কূলে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে টিনের চিমনির ইটভাটা। নাম এএইচ ব্রিকস। এই ইটের ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনায়নের লাকড়ি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই এবং লাইসেন্স বিহীন এই ইটের ভাটা স্থাপন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সরকার প্রতিটি ইটের ভাটায় ঝিক জাঁক পদ্ধতিতে অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও এই ইটের ভাটায় এখনো মান্ধাতা আমলের টিনের চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ।
এএইচ ব্রিকস এর প্রোপাইটর আলাল এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় আমি সহ ১১টা ইটভাটা রয়েছে সেখানে কোন অভিযান এবছর হবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর এর সাথে কথা হয়েছে আমাদের। এখানে কাঠ পোড়ানো হবে এতে কেউ কিছু করবে না। কুষ্টিয়ায় অধিকাংশ ভাটাতে কাঠ পোড়ানো হয়। সব ভাটায় অভিযান হবে তবে আমাদের ভাটায় অভিযান হবে না। আগে ১৭টা ইট ভাটা আমাদের সাথে ছিল এখন ৬টি ভাটা আমাদের থেকে বেরিয়ে গেছে। কেন অভিযান হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব সিস্টেমে চলে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, আলাল ক্ষমতা দেখিয়ে প্রকাশ্য রাতদিন একভাবে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে তার এএইচ ব্রিকসে অবৈধ ভাবে কাঠ পোড়াচ্ছে। বলতে গেলে এই ভাটায় যেন বনাঞ্চলের কাঠ পোড়ানোর মহা উৎসব চলছে।
স্থানীয়রা জানান, ইটের ভাটায় যেভাবে কাঠের আগুন জ্বলছে যেন থামানোর কেউ নেই। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই হরিপুরে স্থাপিত ইটের ভাটায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো বন্ধ সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মোঃ শোয়াইব এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভাটাতে কাঠ পোড়ালে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের সামাজিক বনায়ন থেকে কাঠ না নিলেই হল।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মোঃ আতাউর রহমান জানান, কুষ্টিয়াতে মোট ১৩৯ টা ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টা ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়া। আমরা মাঝে মধ্যেই অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালায়। এবছর ১৮টা ইট ভাটায় অভিযান চালিয়েছি। এতে ৩৬ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বেশকিছু ইটভাটা আমরা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছি।